দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। পবিত্র রমজান মাস প্রায় সমাপ্তির পথে। আবারও একটি বছর পর ফিরে এলো খুশির ঈদ।
আমাদের পরিবারগুলোর এই মুহূর্তে ঈদকে ঘিরে কত রকম পরিকল্পনা। কেউ ঈদের নতুন জামা কিনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, কেউ ঘর সাজানো, কেউ ঈদের দিনটিতে কিভাবে উদযাপন করবে সেই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। শহুরে মানুষেরা পরিবার–পরিজনদের সাথে ঈদ করবে বলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। বিশেষ করে পরিবারের শিশুদের মধ্যে ঈদের আনন্দ যেন একটু বেশীই চোখে পড়ে।
এতক্ষণ আমাদের সমাজের একটি অংশের ঈদ উদযাপনের কথা হলো মাত্র। আরো একটি অংশ আছে, যাদের মনে চারপাশের ঈদ আনন্দের ঢেউ মৃদু দোলা দিয়ে গেলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্যান্য দিনের মতই এই দিনটিও কাটাতে হবে। হ্যাঁ,তাদের কথাই বলছি, যারা সমাজের মূল স্রোতের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়! যে শিশুটি রাস্তায় বেড়ে উঠছে, যে শিশুটির বাবা–মায়ের সাধ্য নেই তাকে ঈদের নতুন জামা কিনে দেয়ার কিংবা যে শিশুটি জানেই না তার বাবা – মায়ের পরিচয়!
তাদের অন্যান্য দিনের মত এই দিনটিও হয়তো পথে পথে কাগজ কুড়িয়ে কাটবে কিংবা দু’বেলা অন্ন সংস্থানের কাজেই ব্যস্ত থাকবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত গান এই মুহূর্তে আমাদের প্রায় সকলের কানেই বাজবে, “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ। তোর সোনা–দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ।” এই গানটিও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঈদের আনন্দ শুধু নিজের জন্যই নয় বরং নিজের আনন্দকে সবার মাঝেই বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই প্রকৃত আনন্দ, প্রকৃত সুখ।
শুধু এই গানটিই নয়, ইতিহাস থেকেও যদি আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি তাহলে দেখতে পাই, রাসূল (সাঃ) ঈদের দিন নামাজ শেষে একটি এতিম শিশুকে কাঁদতে দেখে সমব্যথিত হয়ে তাঁর নিজের ঘরে নিয়ে যান এবং শিশুটির অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাই ঈদ যেন আমাদের হৃদয়কে আরও প্রসারিত করে, যেন আমরা ধনী–গরীব মিলেমিশে একটা সুখী, সমৃদ্ধিশালী সমাজ গড়ে তুলতে পারি এই প্রত্যাশাই করি।
আমরা পথশিশু সেবা সংগঠন পরিবার এই প্রত্যয় নিয়েছি যে, এই দিনটিতে অবশ্যই আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত শিশুদের সাথে থাকবো। পথবাসী শিশু এবং স্বেচ্ছাসেবী মিলে আমরা একসাথে এই দিনটির আনন্দ ভাগ করে নিবো। পথশিশু সেবা সংগঠন পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক!